জহিরুল ইসলাম
প্রায় সময়ই শুনা যায় যে - সফলতা তার রক্তের সাথে মিশে আছে। কিন্তু এই ধরনের গুন খুবই দুর্লভ, অর্থাৎ এ সচরাচর দেখা যায় না। এরকম দুর্লভ একজন মানুষ হলেন জহিরুল ইসলাম যার রক্তের সাথে সফলতা মিশে আছে।
জহিরুল ইসলাম একটি ব্যবসায়িক পরিবারে জন্মগ্রহণ করে ছিলেন এবং খুব অল্প বয়সেই ব্যবসাকে তিনি তার পেশা হিসেবে ঠিক করে ফেলেন। ১৯৬৪ সালে তিনি ‘ইসলাম গ্রুপ’-এর প্রতিষ্ঠা করেন। সেই থেকেই তিনি তাঁর অটল লক্ষ্য ও তীক্ষ্ণ নেতৃত্ব দিয়ে ব্যবসাবাণিজ্যের স্বর্ণশিখরে পৌঁছেছেন। ইচ্ছাশক্তি ও পরিশ্রম দ্বারা তিনি খুবই গৌরবময় জীবন পার করেন। তাঁর কীর্তিতে বাংলাদেশের ব্যাবসায়িক প্রেক্ষাপট অনেকটাই পালটে গিয়েছে এবং যার ফলে তাকে বাংলাদেশের ব্যাবসা-বাণিজ্যের পিতা বলা হয়।
বিভিন্ন ধরনের কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠান নিয়ে ‘ইসলাম গ্রুপ’ গঠিত। এদের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন মার্কেটিং কোম্পানি, নির্মাণ ব্যবসা, রিয়েল ষ্টেট, বৈদেশিক আমদানি-রপ্তানি এবং এছাড়াও বিভিন্ন অর্থনৈতিক লেনদেন সংক্রান্ত ব্যবসা।
জহিরুল ইসলামের সফলতার পিছনে প্রধান যে বিষয়টি কাজ করেছে সেটি হল তাঁর ব্যবসা এবং ব্যবসায়িক পরিবেশ সম্পর্কে অবগত হওয়া যে, এসব আসলে কিভাবে কাজ করে এবং কিভাবে উন্নতির পথে এগিয়ে যেতে হয়। তাঁর অধীনে যারা চাকরী করতো, তাদের সকলের ব্যাপারেই তিনি অনেক যত্নশীল ছিলেন। পাশাপাশি ‘ইসলাম গ্রুপ’-এর অধীনে যেসকল প্রতিষ্ঠান ছিল, সেগুলোর ব্যাপারেও অনেক খেয়াল রাখতেন। একারনেই অনেক মানুষই সেখানে চাকরী করে খুবই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন।
জহিরুল ইসলাম শুধুমাত্র ব্যবসায়িক ক্ষেত্রেই সফল ছিলেন না, তাঁর অধীনে চাকরিরত মানুষদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রদানেও তিনি ছিলেন পথপ্রদর্শক। এসকল সুযোগসুবিধাগুলো হল- চিকিৎসা সুবিধা, চাকরী ভাতা, দুর্ঘটনা ভর্তুকি এবং চাকরিরত অবস্থায় প্রশিক্ষণ গ্রহণের বিশেষ সুবিধা।
সফলতা জহিরুল ইসলামের রক্তের সাথে মিশে ছিল।
কাজ করার জন্য একটা উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করার মাধ্যমে ‘ইসলাম গ্রুপ’ মূল সফলতা পেয়েছে। কারন এর মাধ্যমে এই গ্রুপে যারা চাকরী করতো তাঁরা বুঝতে পারে যে, তাঁরা কোম্পানির কাছে শুধুমাত্র কাজ করার কোন যন্ত্র বিশেষ না। এটিই ছিল জহিরুল ইসলামের সফলতার পিছনে অন্যতম প্রধান মূলমন্ত্র।
জহিরুল ইসলাম অনুধাবন করেন যে, ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে সফলতার পাশাপাশিও জীবনে আরও বড় কিছু করার আছে। সেই ধ্যান-ধারনা থেকেই তিনি ১৯৮৯ সালে ‘জহিরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল’ প্রতিষ্ঠা করেন। হাসপাতালটি ৫০০ কক্ষ বিশিষ্ট এবং সাধারন সেবার পাশাপাশি জরুরী সেবাও প্রদান করে থাকে।
১৯৯৬ সালে জহিরুল ইসলাম মৃত্যু বরণ করেন এবং সেই সাথে সাথে ‘ইসলাম গ্রুপ’ তিনটি ভিন্ন কোম্পানিতে বিভক্ত হয়। গ্রুপ তিনটি হল- ইসলাম গ্রুপ, নাভানা গ্রুপ এবং আফতাব গ্রুপ। এই তিনটি গ্রুপও বর্তমানে বাংলাদেশের ব্যবসা ক্ষেত্রে শীর্ষ স্থানগুলো দখল করে আছে এবং এটিই জহিরুল ইসলামের সফলতার প্রমান দেয়।
আসলেই সফলতা জহিরুল ইসলামের রক্তের সাথে মিশে ছিল!