মাশরাফি-বিন-মুর্তজা
মাত্র ১৭ বছর বয়সে আবির্ভাবেই চমকে দিয়েছিলেন সবাইকে। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের মরা উইকেটেও গতিতে ব্যাটসম্যানদের নাভিশ্বাস তুলছেন। আর ব্যাট হাতে নামলেই বোলারদের তুলে তুলে মেরেছেন। ২০০০ সালে বাংলাদেশের ক্রিকেটে এমন কারো আবির্ভাব সাড়া ফেলে দেওয়ার মতো ঘটনাই। সাড়া দেশে ছড়িয়ে পড়ল নামটা, কৌশিক। পুরো নাম মাশরাফি-বিন-মুর্তজা। তিনি ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’ হিসেবে পরিচিত।
ম্যাকগ্রার বা চামিন্ডা ভাসের মতো শত শত উইকেট নেই তার। পাকিস্তানের শোয়েব আখতারের মতো গতিদানবও ছিলেন না তিনি । পরিসংখ্যান, স্পিড গানের হিসাব দিয়ে তাকে চেনা যাবে না বা তুলনাও করা যাবে না। তিনি নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ফাস্ট বোলার, সেরা ক্রিকেটার ও সেরা দলনায়ক। তিনিই দেশের প্রথম গতিতারকা। তিনি বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে সফল অধিনায়ক।
মাশরাফি-বিন-মুর্তজা তরুন ক্রিকেটারদের সবচেয়ে বড় প্রেরণার নাম। বাংলাদেশে যেকোন চলচিত্র বা নাটক বা অন্য কোন তারকার চেয়ে তিনি সবচেয় বড় তারকা। সাধারন মানুষ থেকে শুরু করে, তরুন, রাজনীতিবিদ পযর্ন্ত আছে তার ভক্তের তালিকায়।
দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলা নড়াইলে ১৯৮৩ সালের ৫-ই অক্টোবর মাশরাফি পিতা গোলাম মুর্তজা ও মাতা হামিদা মুর্তজার ঘরে জন্ম গ্রহন করেন। ছোটবেলাতে বাঁধাধরা পড়াশোনার পরিবর্তে খেলাধুলার প্রতি প্রচন্ড আগ্রহ ছিল। আর মাঝে মধ্যে চিত্রা নদীতে সাঁতার কাটাতেন। ২০০৩/০৪ শিক্ষা বর্ষে জাহাঙ্গিরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন বিভাগে ভর্তি হন। তরুণ বয়সে ক্রিকেটের প্রতি তার আগ্রহ জন্মায় । ব্যাটিংয়ে পারদর্শি ছিলেন যদিও এখন বোলার হিসেবেই তিনি খ্যাত। নিজের গুণেই হয়ে উঠলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটের প্রতীক।
বোলার মাশরাফি হিসেবে যতটা না জনপ্রিয় তার চেয়ে বেশী জনপ্রিয় তার অসাধারন নেতৃত্বগুণের জন্য। দেশকে সবচেয়ে বেশি ওয়ানডে ম্যাচ জেতানো অধিনায়ক এখন তিনি। একটা সময় অনেক আন্তর্জাতিক মানের স্পিনার থাকলেও বাংলাদেশে কোন ভাল ফাস্ট বোলার ছিল না। মাশরাফি সেই শূন্যস্থান পূরণ করেন।
গতিময় আর আক্রমণাত্মক বোলিং দিয়ে মাশরাফি ওয়েস্ট ইন্ডিজ সাবেক ফাস্ট বোলার অ্যান্ডি রবার্টসের নজর কাড়েন। ২০০১ সালে কোন প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট না খেলেই টেস্টে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অভিষেক হয়। সেই অভিষেকেই ১০৬ রানে ৪টি উইকেট নিয়েছিলেন। তবে সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো তার প্রথম ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচ ছিল এটি। তিনি এই কৃতিত্বের অধিকারী ৩১তম খেলোয়াড়।
মাশরাফি-বিন-মুর্তজা তরুন ক্রিকেটারদের সবচেয়ে বড় প্রেরণার নাম
বাংলাদেশে যেকোন চলচিত্র বা নাটক বা অন্য কোন তারকার চেয়ে তিনি বড় তারকা
সাধারন মানুষ থেকে শুরু করে, তরুন, রাজনীতিবিদ পযর্ন্ত আছে তার ভক্তের তালিকায়
ক্রিকেটে প্রতিপক্ষের চেয়ে মাশরাফির বড় শত্রু ছিল হলো ইনজুরি। হাটুর চোটে জর্জরিত হয়ে একসময় অধিনায়কত্ব থেকে সরে যেতে হয় তাঁকে। ক্যারিয়ারে দুই হাঁটুর চোটে কারনে মাশরাফিকে খেলা থেকে বাইরে থাকতে হয়েছে বেশির ভাগ সময়। এ পর্যন্ত ক্যারিয়ারে ১১ বার চোটের কারণে দলের বাইরে যেতে হয়েছে তাকে। চোট তাকে কতটা ভুগিয়েছে তার প্রমান তার ক্যারিয়ারই বহন করে। ২০০১ সালে টেষ্টে অভিষেক হলেও ২০০৯ পর্যন্ত তিনি ৩৬ টি টেষ্ট খেলেছেন। ২০০৯ এর পর আর কোন টেষ্ট খেলেননি। ২০০১ সালের নভেম্বরে ওয়ানডে অভিষেক হয়েছিল। ওয়ানডের সংখ্যা ২০১৮ সালের জানুয়ারী পর্যন্ত মাত্র ১৮৭ টি। বাংলাদেশের ক্রিকেটে তিন সংস্করণেই নেতৃত্বর দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছিলেন ২০০৯ সালে।
মাশরাফি শুধু একজন ভাল বোলারই নয় । মারকুটে ব্যাটসম্যান হিসেবেও তার নাম আছে। ভারতের বিপক্ষে ঢাকায় অনুষ্ঠিত একটি খেলায় তিনি পরপর চার বলে ছক্কা মারেন এবং সেই ওভার থেকে তিনি ২৬ রান সংগ্রহ করেন যা একজন বাংলাদেশী ব্যাটসম্যান হিসেবে এক ওভারে সর্বোচ্চ রান নেওয়ার রেকর্ড।
তিনি ঘরোয়া বিভিন্ন দলের হয়েও খেলেছেন। টি২০ সবচেয়ে আকর্ষনীয় লীগ আইপিএল-এ কোলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে খেলেছেন। ২০১৭ সালে আন্তুর্যাতিক টি২০ থেকে অবসর গ্রহন করেন।
সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজে পড়ার সময় সুমনা হক সুমির সাথে তার পরিচয় হয় এবং ২০০৬ সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ ও এখন দুই সন্তানের পিতা।
কলকাতার জনপ্রিয় দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা মাশরাফি-বিন-মুর্তজাকে ২০১৭ সালে সেরা বাঙ্গালির খেতাব দেয়।
খেলোয়ারী জীবনের বাইরেও সবার কাছে সমান জনপ্রিয় ও উদার ও পরোপকারী হিসেবে তার খ্যাতি আছে। বর্তমানে তিনি একজন রাজনীতিবিদ এবং সাংসদ সদস্য।